Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়মঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়ায় এখন ঘরে বসে প্রায় প্রত্যেকটা কাজ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেছে। তাইতো হাতে থাকা স্মার্টফোন বা কাছে থাকা ল্যাপটপ ব্যবহার করেই করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে এমন অনেক কাজ, যেটা আগে করতে প্রচুর সময় এবং অর্থের খরচ পড়তো।
আজকের আর্টিকেলে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। প্রযুক্তির উন্নয়নে দেশ এখন অনেকটাই এগিয়ে, তাই এ সকল কাজকর্ম প্রায় সবই অনলাইনেই করা হচ্ছে। কিন্তু অনলাইনে কিভাবে জমির খাজনা পরিশোধ করবেন, এটা জমির মালিকদের কারো কারো একদমই অজানা।
তাই যে বা যারা অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন না, তারা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। নিজের অর্থ এবং সময় বাঁচিয়ে হাতে থাকা স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটারের সাহায্যে খুব সহজেই পরিশোধ করুন আপনার জমির খাজনা।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার পূর্বে প্রথমত জানা প্রয়োজন, জমির খাজনা কি?. কেন বা কোন কারনে জমির খাজনা প্রদান করা হয় এবং জমির খাজনা দিতে কি কি ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন পড়ে ইত্যাদি সে সম্পর্কে। তাহলে আসুন জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সহ আরো বিস্তারিত পর্যায়ক্রমে জেনে নেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নাগরিক কর্তৃক অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ পদ্ধতির অফিসিয়াল নোটিশ মনোযোগ সহকারে নিচে পড়ুন এবং অনলাইনে জমির খাজনা প্রেরণ করতে আমাদের উল্লেখিত ধাপ গুলো অনুসরণ করুন।
আরও দেখুনঃ সাধারন জ্ঞান
সাধারণভাবে– জমি, বাড়ি, গাড়ি, দোকান বা অন্য কোন সামগ্রী ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীর মালিক কে নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে চুক্তিভিত্তিক কর মূল্য প্রদান করা হয়, আর সেটাকেই খাজনা বা জমির খাজনা বলা হয়ে থাকে। খাজনা কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। তার একটি হচ্ছে: মোট খাজনা অপরটি নিট খাজনা।
উৎপাদনের উপকরণ ব্যবহার বাবদ চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ মোট অর্থ মালিক কে প্রদান করা হয় তাকে বলা হয়ে থাকে মোট খাজনা। অপরদিকে শুধু জমি ব্যবহার করার জন্য মালিককে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে বলা হয়ে থাকে নিট খাজনা। অর্থাৎ জমির খাজনা প্রদান করা নিট খাজনার অন্তর্ভুক্ত এবং নিজস্ব মূলধনের সুদ, নিজস্ব শ্রমের মজুরি, ঝুঁকি বহনের পুরস্কার সরকারকে প্রদেয় কর প্রদান করা হচ্ছে মোট খাজনার অন্তর্ভুক্ত।
একটি দেশের নাগরিক হিসেবে জমির খাজনা যথাসময়ে পরিশোধ করা দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাই যাদের জমি আছে তাদের সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে জমির খাজনা পরিশোধ করা অতীব জরুরী। তাছাড়াও জমির খাজনা নির্দিষ্ট সময় পর পরিশোধ না করলে নানা প্রকার ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়।
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা ইচ্ছা করে জমির খাজনা পরিশোধ করতে চায়না। কখনো সময়ের অভাবে কখনো বা টাকার অভাবে। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার জমির খাজনা পরিষদ না করে থাকে, তাহলে তার প্রতি সার্টিফিকেট মামলা হতে পারে– যেটা সরকার অনুমোদন প্রাপ্ত। তাই অবশ্যই জমির খাজনা সঠিক সময়ে জমা দেওয়াটা জরুরী।
একসময় জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য ভূমি অফিসে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে জমির খাজনা দেওয়া অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। এখন ভূমি অফিসে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। শুধুমাত্র কাছে থাকে স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেই জমির খাজনা বা জমির কর পরিশোধ করা সম্ভব হয়। যেহেতু এটা একটা আইন এবং জমির খাজনা সঠিক সময়ে পরিশোধ না করার কারণে সার্টিফিকেট মামলা হয়ে যায়, তাই অবশ্যই জমির কর কখনো বাকি রাখাটা ঠিক নয়।
অনেকেই এমনটা ভেবে থাকেন, জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য মনে হয় বিভিন্ন স্থান রয়েছে এবং তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাই ফরহামেশাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন যে, জমির খাজনা কোথায় পরিষদ করা ভালো?.
যে বা যারা এমন চিন্তা ভাবনা করেন তাদেরকে বলব– ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে শুধুমাত্র জমির খাজনা পরিশোধ করা সর্বোত্তম। কেননা জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একটি করে ভূমি অফিস থেকে থাকে, যেখানে ভূমি কর্মকর্তা নিযুক্ত থাকেন।
তাই আপনি আপনার নিজস্ব জমির খাজনা বা ট্যাক্স প্রদানের জন্য আপনার ইউনিয়নের ভূমি অফিসে যেতে পারেন। আর যদি চান তাহলে অনলাইনের মাধ্যমেও এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন কারো কোনো প্রকার সাহায্য ছাড়া। যেটা আমরা এবার আপনাদের ধাপে ধাপে জানিয়ে দেব।
অনলাইনে যেকোনো কিছু করতে গেলে বেশকিছু ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন পড়ে এটা আমাদের সকলেরই কমবেশি জানা। কেননা যেকোনো অ্যাকাউন্ট বা যেকোনো কিছু করতে আমাদের এনআইডি কার্ডের প্রয়োজন পড়ে, সে সাথে নিজস্ব ছবি বা আরো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হয়।
তবে জমির খাজনা প্রদানের ক্ষেত্রে তেমন বেশি ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন পড়ে না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটা বিষয় মাথায় রাখতে হয় সেটা হচ্ছে, জমির দাগ নাম্বার। তাই আপনি যদি অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করতে চান সেক্ষেত্রে জমির দাগ নাম্বার অবশ্যই মনে রাখবেন, চাইলে একটা ফটোকপি সঙ্গে রাখতে পারেন।
তবে হ্যাঁ এর পাশাপাশি আপনার কাছে থাকতে হবে:
হাতেগোনা মাত্র এই কয়েকটি জিনিস থাকলে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে জমির খাস না প্রদান করতে পারবেন।
আরও দেখুনঃ নামের অর্থ
আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে জমির খাজনা পরিশোধ করতে চান সেক্ষেত্রে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করতে হবে।
প্রথমত: সরাসরি ভূমি উন্নয়ন অফিসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। অথবা ভূমি উন্নয়ন এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে হবে। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে ক্লিক করুন: ldtax.gov.bd/citizen/register
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন: এখানে
দ্বিতীয়ত: অ্যাপ্লিকেশন টি ইন্সটল করার পর অফিস কর্নার এবং নাগরিক কর্নার এই দুটি অপশন থেকে সিলেক্ট করতে হবে “নাগরিক কর্নার” এই অপশনটি।
তৃতীয়ত: লগ ইন করতে হবে। তবে হ্যাঁ যদি আপনার আগের অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে তাহলে নিবন্ধন করুন এই অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে আর যদি আপনি নতুন হয়ে থাকেন তাহলে লগইন অপশনে ক্লিক করুন।
চতুর্থত: সঠিকভাবে বসিয়ে দিন মোবাইল নাম্বার, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ সহ উল্লেখিত সকল তথ্য।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পূরণের পর আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।
পঞ্চমত: এবার উপরের বাম পাশের মেনু আইকনে ক্লিক করে নতুন খতিয়ান যুক্ত করুন এই অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
ষষ্ঠমত: নতুন করে করার জন্য আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা এবং সর্বশেষ খতিয়ান নাম্বার পূরণ করতে হবে। এক কথায় ফাঁকা স্থানগুলো সঠিক ইনফরমেশন এর মাধ্যমে ভরাট করে সবশেষ বর্তমান খতিয়ান বা পূর্বের খতিয়ান রশিদের এক কপি ছবি মোবাইলে তুলে সাবমিট করতে হবে।
এরপর সাবমিটের ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খতিয়ানটি এড হয়ে যাবে আপনার নামে। আর আপনি চাইলেই খতিয়ান যুক্ত হওয়ার পূর্বে পেমেন্ট করতে পারবেন না । তাই ভেরিফিকেশনের জন্য আপনাকে কিছুটা সময় দিতেই হবে। আর খতিয়ান এড হয়ে যাওয়ার পরবর্তীতে আপনি আবার পরবর্তী ধাপ অনুসরণ করবেন।
সপ্তমত: এবার বাম পাশে মেনু আইকনে ক্লিক করে পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
অষ্টমত: পেমেন্ট করতে হবে টাকা। এরপর আপনি চাইলে মেনু থেকে দাখিলা অপশনটি সিলেক্ট করে খুব সহজেই প্রেরণকৃত টাকার একটি ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। যেটা প্রয়োজনে প্রমাণ স্বরূপ দেখাতে পারবেন।
আর ডাউনলোড না করলেও কোন সমস্যা নেই। কেননা অ্যাপস থেকে বা তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইটে গিয়ে আপনি যত মাসের যে তারিখে খাজনা পরিশোধ করবেন সেগুলোর ডিটেলস মেনুতে দাখিলা অপশনে সম্পূর্ণ থেকে থাকে। ব্যাস এটুকুই। হয়ে যাবে আপনার অনলাইনের মাধ্যমে জমির খাজনা প্রদান করা।
পরিশেষে: অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত আর্টিকেল আজকে এখানেই শেষ। আশা করি আপনি খুব সহজেই অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম দেখে খুব সহজেই আপনার নিজস্ব মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করে অথবা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে খুব সহজে ট্যাক্স প্রদান করতে পারবেন।
তো পাঠক বন্ধুরা, অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যদি কোন মন্তব্য বা প্রশ্ন থেকে থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানান। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
আরও দেখুনঃ